মেসে খুন
প্রকাশিত: জানুয়ারী ১৫, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,713 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

লেখকঃ Robin Mohanto
………………

স্টেশনে বসে আছি, দুপুর হয়ে এসেছে। সকাল থেকেই পেটটা খালি । বেরিয়েছি সেই ভোর রাতে। ভোররাতে ওঠাটা অভ্যাসের বাইরে নয় কিন্তু না খেয়ে বের হওয়াটা অভ্যাসের বাইরে। সেই ভোররাতে কিসের একটা হট্টগোল পড়ে গেল মেসে। হট্টগোলের কারন জানার বিশেষ ইচ্ছা কাজ করছিল না, কারন সপ্তাহে এই একটা দিন যেদিন ভালো ভাবে ঘুমাতে পারি। ইতিমধ্যেই পুলিশের গাড়ির হুইসেল পেলাম,কিন্তু বিশেষ আগ্রহ জন্মাল না। লেপটা ভালোভাবে নিয়ে সুতে যাব তখনই দরজায়
নক করার আওয়াজ শুনলাম। নক টা ভিন্নরকম ছিল এভাবে কেউ দরজা ধাক্কায় না বিশেষ করে এতো সকালে তো নয়ই। দরজার ওপাশ থেকে আওয়াজ আসল –
-ভাই একটু দরজাটা খুলুন। বাইরে বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে।
ওহ ওপাশে ম্যানেজারের গলা। ম্যানেজার এখন কেন? সাত সকাল বেলা। উনি তো আমার দরজা ধাক্কানোর সাহস পেত না।

-এখন খুলতে পারব না যাও।
-ভাই খুন হইছে। খুলুন।

রাতে মেসে কি পার্টি টার্টি হয়েছিল, সেখানে খুন! সবাই তো সবার চেনা। একে অপরের কলিগ বা খুব ভালোভাবে পরিচিত। খুনের কি হলো? আর হতেও পারে পার্টি টার্টি হয়েছে সবাই নিশ্চয় আরামছে মদ গিলেছে। সপ্তাহের এই দিনটাতে সবাই খায়। ওখানে ছোট বড় বিভেদ দেখিনি। না থাকত মদের কোয়ালিটির। সস্তা দেশি থেকে শুরু করে নাম না জানা দামি ব্র্যান্ড সবই থাকত।

বিরক্তিভরে দরজাটা খুললাম।
বাইরে রক্ত মাখানো! পুরো মেঝে রক্ত। রক্তটা আসছিল জয়ের রুম থেকে। বেশ ভালো একটা ছেলে! পড়ে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে। ছেলেটার স্বভাব বেশ অগোছালো। কারো সঙ্গে তেমন কথা বলে না। কলেজের ক্লাসেও খুব একটা যায় না। সারাদিন তার ঐ রুমেই। অন্তর্মুখি ধরনের ছেলে। যতটুকু দরকার ততটুকু কথা বলত। আর কথাগুলো সবাই বুঝত না। কথা গুলো হয় ছিল
মিনিঙলেস অথবা আধ্যাত্মিক ধরনের। এই দুই ধরনের কথা গুলো সবাই বুঝতে পারে না। আধ্যাত্মিক কথা বোঝার জন্য বিশেষ ক্ষমতা লাগে।

কে মারতে পারে ছেলেটিকে? ভাবনায় পড়লাম। পুলিশের লাঠির গুতোই ভাবনা থেকে বের হলাম। সবাইকে লাইনে দাড়াতে বলছে। জিজ্ঞাসাবাদ হবে। আমি যথারীতি লাইনের শেষে পড়লাম। মেস ম্যানেজার। চোখ মুখে ভয়ের ছাপ। খুব ভীরু ধরনের লোক ছিলেন, তাই হয়ত ভয় পেয়ে গেছে। বেশ ভালোভাবেই হয়ত ভয়টা পেয়েছে। গা দিয়ে ঘাম ঝরছে শীতের সকালে।

ওদিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করছে । ঘটনা জানানোর জন্য সামনের জনকে বলল।
ওনার সহজ সরল উত্তর কিছু জানেন না। এবার বলল কি হয়েছিল সেটা বলুন।
সবাই একসঙ্গে বললো, তারা প্রতি সপ্তাহেই এটা করে। এক সঙ্গে খাওয়ার একটা আয়োজন। কাল রাতেও তেমনটাই হয়েছিল। রাত ২ টায় সব শেষ করে যে যার রুমে গিয়েছিল।
-ওখানে সবাই ছিলেন?
আমার দিকে আঙ্গুল করে ম্যানেজার বলল উনি বাদে।
ওহ্ এইবার আমার পালা, প্রশ্নের মেশিনগান ছুটবে আমার দিকে, আঘাত সহ্য করার প্রস্তুতি নিয়ে নিলাম।
-আপনি ছিলেন না কেন?
-আমি কোনোদিনই থাকি না স্যার।
-সবার সঙ্গেই ঝামেলা,শুধু ছেলেটাকে মেরে দিলেন?
পুলিশের এরকম কথায় মোটেই অবাব হলাম না। আজকালকার পুলিশগুলো এরকই বা এটাই পুলিশের কৌশল।
স্বাভাবিক ভাবে বললাম না স্যার, ওর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ ভালোই ছিল। সবার থেকে আমারই ভালো সম্পর্ক ছিল।
-তাহলে এত ভালো বন্ধুকে….?
-স্যার নতুন কোনো কৌশল দেখুন। এটা কাজ করবে না। অথবা আসল অপরাধীর উপর প্রয়োগ করুন।
বিরক্তসূচক মাথা ঝাকায়ে ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসা করল, সিসিটিভি ফুটেজ আছে?
-না স্যার।
পুলিশ গুলো খুব সহজে সব কিছু শেষ করতে চায়। মেসের পরিস্থিতি দেখেও ওনার মাথায় কেন যে সিসিটিভির কথা আসলো বুঝতে পারলাম না। ১৩০০ টাকার মেস। এই শহরে! প্লাস্টার খুলে পড়ছে সেখানে সিসিটিভি। এখানকার সবাই ক্ষুদ্র মানুষ, ছোট ছোট চাকুরি করে বা গরীব ছাত্র। অত নিরাপত্তার দরকার পড়ে না।

পুলিশগুলো লাশ নিয়ে চলে গেল। ম্যানেজারের চোখের কেন জানি একটা পরিবর্তন হলো। মনে হলো কোনো একটা শংকা থেকে মুক্তি পেল।

এখনো স্টেশনেই বসে আছি। যা গেল সকালে খাওয়া দাওয়াও হয় নি। ভেবেছি কোনো ট্রেন আসলে সেখানে উঠে চলে যাব কোথাও। ট্রেনের সময়টাও জানা নেই। সেই বসেই আছি।
হঠাৎ ম্যানেজারকে দেখলাম। সঙ্গে বেশ বড় দুটি ব্যাগ। কাপড় রাখার ব্যাগ। মনে হচ্ছে পুরো সংসার দুই ব্যাগে।
শুনেছিলাম যুদ্ধের সময় মানুষ এভাবে পালাত।
ম্যানেজার কই পালাচ্ছে?
একটু খটকা লাগলো, ম্যানেজারের সকালের ঐ চেহেরা এখন আবার পালানো।
মনে মনে ২+২=৪ মিলালাম। কিছু একটা করতে হবে ভাবতে ম্যানেজারের সামনে গেলাম। আবার তার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল।
ব্যাগগুলো না দেখার ভান করে বললাম।
-এদিক কোথায়?
আসুন চা খাই।
ম্যানেজার অপ্রস্তুত ভাবে বলল
-না।
আর দেরি করলাম না। উদ্দেশ্য ওনাকে চা খাওয়ানো ছিল না । উদ্দেশ্য ছিল ওনাকে আটকানো আর আটকানোর জন্য এটাই যথেষ্ট। জানি উনি আর পালাবেন না।

সন্ধ্যায় মেসে ফিরলাম। দেখলাম ম্যানেজার আছে।
দুদিন কেটে গেল কিছুই ঘটল না। তারপর হঠাত এক রাতে ম্যানেজার আমার রুমে আসল।
বলতেছে ভাই।
-জয়কে দেখেছি।
-তার লাশ তো এখন, সাড়ে তিন হাত নিচে। মাথাটা হয়ত এতক্ষন পিঁপড়া খাওয়া শুরু করেছে, কি ভয়ংকর এখন হবে বুঝতে পারছেন ম্যানেজার সাহেব?
-হুম ভাই,ভয়ংকরই ছিল। গা থেকে মাংস খুলে পড়ছিল। আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছিল।
-খুব মায়া ছিল হয়ত আপনার উপর। তাই।
– খুব ভয় করে ভাই। আপনি দেখেন নি?
-হুম প্রথমদিন রাতেই দেখেছিলাম। আমার সঙ্গে অনেক গল্প হয়েছে। প্রথমদিন তো, কোনো পচন ধরেনি। বেশ ভালোই ছিল চেহেরা।
-কি কি বলেছে।
-বলেছে আপনাকে ও মেরে ফেলবে।
অপ্রস্তুত ভাবে…
-কেন?
-ম্যানেজার সাহেব, সব গল্পই আমাকে বলেছে । ওই যে শিলটা দিয়ে মেরেছিলেন না? আমাদের মেসের শিলটা? যেটা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেটা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিল। দেখিয়ে বলল, কিভাবে মেরেছেন।

ম্যানেজার সাহেব অজ্ঞান। ঘুম থেকে উঠে হয়ত নিজেকে জেলে আবিষ্কার করবেন। আর নিজেকে হয়ত জিজ্ঞাসা করবে কেন মারলাম?

সম্পর্কিত পোস্ট

মা

মা

ইশু মণি বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে তাসবিহ্ ঘরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে ঘরের এক কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।টিনের চালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ায় অনবরত শব্দ হচ্ছে, বাসার সাথে লাগানো পেয়ারা গাছটার বিশাল বড় ডালপালা গুলো চালের উপর চলে এসেছে বারবার সেগুলো বারি খাচ্ছে যার কারণে শব্দ...

শখের পাখি

শখের পাখি

লেখিকা-উম্মে কুলসুম সুবর্ণা এই তো সেদিন মেলা থেকে বাসার ছোট্ট ছেলেটা আমাকে কিনে এনেছিলো। তখন তো ছানা পাখি ছিলাম এখন বুড়ো হয়েছি। বাসায় মোট ছয়জন থাকে। আগে ভাবতাম দুই রুমের ক্ষুদ্র ফ্ল্যাট এ এত গুলো মানুষ কিভাবে থাকতে পারে। পরে বুঝলাম এই সব কিছু ছেলের বউয়ের চমৎকার। অনেক...

নীল কমলিনী

নীল কমলিনী

অনুগল্প: নীল কমলিনী লেখা: অনুষ্কা সাহা ঋতু . চন্দনের শেষ ফোঁটাটা দিয়েই মা ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন। ছোট বেলায় এমন কত সাজিয়েছেন আমাকে। তখন মুচকি মুচকি হাসতেন, আর আজ কাঁদছেন। মা টাও ভারি অদ্ভুত। আচ্ছা, তবে কি দুটো সাজের অর্থ ভিন্ন! কি জানি? . হঠাৎ শঙ্খ আর উলুধ্বনি ভেসে...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *