রিহানের দাদা
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০১৮
লেখকঃ vickycherry05

 1,542 বার দেখা হয়েছে

এই লেখক এর আরও লেখা পড়ুনঃ vickycherry05

গল্প লেখকঃ
সুর্বনা ইসলাম
(এপ্রিল – ২০১৮)
……………

উফফ….মেজাজ গরম হচ্ছে!!!!

একদম অসহ্য…কারও কোন হুঁশ নেই। সেই কখন থেকে বাগানে দাঁড়িয়ে আছি। কেউ বাসার দরজা খুলছে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি বুড়ো মানুষ সেই কোন অতীত থেকে এসেছি টাইম মেশিনে করে। নিজের ভবিষ্যৎ এর নাতী নাতনীদের দেখবো বলে। অথচ কেউ দরজাই খুলছে না।

এদিকে মশা গুলোও বেশ পাজি। একদম ছিড়ে খাচ্ছে। এক একটা একদম হারে হারে শয়তান। আগে যদি জানতাম ভবিষ্যৎ এর মশা গুলা এই রকম পাজি হবে সাথে মশার কয়েল নিয়ে আসতাম।

যাক এখন বরং ঘুমিয়ে নেই। আজ রাত টা এই খচ্চর মশা গুলোর সাথে কাটানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কেউ তো আর দরজা খুললই না। আমি ভেবেছিলাম অতীত থেকে এসে সবাইকে চমকে দেব। কিন্তু ওমা…একি এখানে এসে এত বেল বাজালাম কেউ দরজাই খুলল না।

এগুলো বলতে বলতে রিহানের দাদা বাগানের দোলনায় ঘুমিয়ে পড়ল। তিনি একজন বিজ্ঞানী ভবিষ্যৎ এ এসেছে তার নাতী নাতনী দের সাথে দেখা করতে।

সকালবেলা রিহান ভিডিও গেম খেলতে খেলতে বাগানে পৌছে গেলো। তারপর সে লক্ষ্য করলো বাগানে দোলনায় আদিম যুগের একজন মানুষ ঘুমাচ্ছে। সে প্রথমে ভেবেছিল তার আব্বু কিংবা আম্মু কে ডাকবে কিন্তু পরে কি যেন ভেবে সে নিজেই লোকটা কে ঘুম থেকে তুলে তার সাথে কথা শুরু করে দিল।

রিহান বলল-কে আপনি? এখানে কি করছেন?
রিহানের দাদা- এই ছোকড়া। তুই কে? আর আমাকে এভাবে ঘুম থেকে তুললি কেন?
– এই বাগান টা আমার আব্বুর। আমি আমার আব্বুর ছেলে। আর আমার নাম ছোকড়া না রিহান।
– এই বাগান তোর বাপের। আর এটা আমি বিশ্বাস করবো। করবো না কারন এই বাগান তার পর এই বাড়ি সব আমার। এগুলো আমি তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। বুঝেছিস পাজি ছেলে?

– আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন এগুলো আমার বাবার। আর আমি পাজি ছেলে না আমার নাম রিহান। আর আমার বাবার নাম ইমতিয়াজ। বুঝেছেন?
রিহানের দাদার এতক্ষণ এ মনে পরলো। সে কাল রাতে এখানে টাইম মেশিনে করে এসেছিল। এটা ভবিষ্যৎ। ইমতিয়াজ তার ছেলের নাম।
রিহানের দাদা কাশি দিয়ে বললেন -তুই ইমতিয়াজের ছেলে বুঝি। আয় এখানে বস।

রিহান আড়চোখে তার দাদার দিকে তাকিয়ে তারপর দোলনায় বসলো। তারপর সে বলল, – আমি যেই হই আপনি কে?

– আমি রমতিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা হোসেন শাহ। আমি হলাম গিয়ে তোর বাবার বাবা। আমার আরো একটা পরিচয় হলো আমি একজন বিজ্ঞানী। টাইম মেশিন দিয়ে তোদের কাছে এসেছি।

রিহান মাথা চুলকে বলল- আপনার নামটা অনেক কনফিউজিং। দাঁড়ান আমি ফোনের নোট প্যাড এ রেকর্ড করে রাখি।আব্বুকে নামটা দেখাতে হবে তো।

রিহানের দাদা অবাক হয়ে বলল- কিরে তোর কাছে কাগজ কলম নেই?

রিহান বলল- ধুর এগুলো আগের মানুষ ব্যবহার করতো। এখন ওসব কেউ ইওজ করে না।

রিহানের দাদা- দাড়া আমার কাছে কলম আছে। এই বললে রিহানের দাদা তার পকেট থেকে একটা কালো রং এর কলম আর একটা ছোট ডায়রী বের করলো। ডায়রী তে বড় করে লিখলো। রমতিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা হোসেন শাহ।

রিহান খুশি হয়ে বলল – খুব সুন্দর তো আপনার কলমটা। আপনার হাতের লেখাও খুব সুন্দর এই প্রথম কাউকে নিজের হাতে লিখতে দেখলাম।

রিহানের দাদা হতাশ সুরে বললেন- আসলে সব বদলে গেছে।

রিহান বলল -আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলুন তো আমার আব্বু কেন কখনো আপনার কথা আমাকে বলে নি।

রিহানের দাদা কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বলল- তোদের বাসায় আজ কি রান্না হয়েছে রে?

রিহান বলল- এই তো গমের ভাত আর ছাগলের মাংস।

রিহানের দাদা নাক কুঁচকে বলল- কি সব ছাই পাশ খাস। এসব কেউ খায় নাকি।

রিহান হতবাক হয়ে বলল- আপনি না বিজ্ঞানী। বিজ্ঞানীরাই তো আবিস্কার করে বলেছে এগুলোর মধ্যে প্রোটিন আছে।

রিহানের দাদা – আরে রাখ তো তোর প্রোটিন। তোর মাকে বলবি এখন থেকে মুরগির মাংস রান্না করতে।

রিহান মাথা চুল্কে বলল-আচ্ছা।

(যদিও সে কখনো মুরগির মাংস চোখেই দেখে নি)

রিহানের দাদা আবার বললেন -আমাকে একটা কথা বলতো। আমি যখন বললাম আমি টাইম মেশিনে করে এসেছি তুই অবাক হলি না কেন?

রিহান – এখানে অবাক হওয়ার কি আছে। এখন সবার কাছে একটা হলেও টাইম মেশিন থাকে যে যখন খুশি মন চায় অতীতে যায় আবার ফিরেও আসে।

রিহানের দাদা তার দাড়ি চুল্কে বললেন -ও

রিহান বলল-চলো বাসার ভেতরে ঢুকি। তোমার নিঃশ্চই খুব খিদে পেয়েছে?

রিহানের দাদা ইতস্তত করে বললেন – না আমি ঐ ছাই পাশ খাব না।

রিহান বলল-আচ্ছা আমি রিনি কে বলবো তোমার জন্য কিছু বানিয়ে দিতে।

রিহানের দাদা- এই রিনিটা আবার কে?

রিহান খানিকটা ধর্য্য নিয়ে বলল-ও আমার রোবট।

রিহানের দাদা মনে মনে ভাবলেন নাহ এখানে থাকা আর সম্ভব না। এরা রোটকে দিয়ে রান্না করায়। কি অদ্ভুত!!! আবার কি সব ছাই পাশ খায়। আমি বরং কেটে পরি।

রিহান তার দাদা কে ঝাকুনি দিয়ে বলল -কি হলো? চলো।

রিহানের দাদা বললেন -আমার পায়ে খুব ব্যথা করছে কাল রাতে অনেকক্ষণ তোর বাসার সামনে দাড়িয়ে ছিলাম তো। এখন হেঁটে যেতে পারব না। আজ আমি টাইম মেশিনে করে চলে যাই অন্য একদিন না হয় আসবো।
রিহান অবাক হয়ে বলল-কেন কলিংবেল বাজালেই তো পারতে। তাহলে তো আর দাড়িয়ে থাকতে হত না।

রিহানের দাদা ব্যংজ্ঞ করে বলল- এহহ কলিংবেল বাজালেই তো পারতে। সব মিলিয়ে আশি বার কনিংবেল বাজিয়ে ছিলাম তোরা কেউ দরজা খুলিস নি।

রিহান মাথা চুল্কে বলল-শুনি নি হয়তো।

রিহানের দাদা বিরক্তি নিয়ে বলল- আচ্ছা ঠিক আছে আর লজ্জা পেতে হবে না। নে তুই বরং বাড়ি চলে যা।

রিহান তার দাদা কে টাইম মেশিনে বিদায় জানিয়ে বাসায় ফিরে এলো। রুমে ঢুকতেই সে তার মার কান্নার আওয়াজ পেল।
রিহান জানে তার মা যখন কাঁদে তখন ক্রিটিকাল সময়। সে সময় রুমে ঢোকা উচিত না।

তাই সে রুমের বাইরে দাড়িয়ে তার আব্বু আম্মুর কথা শুনতে থাকলো।আর তাদের কথা শুনে তার গাঁ শিউরে উঠলো।

রিহানের আম্মু- জানো আমার না বাবার কথা অনেক মনে পরে। বাবা খুব সহজ সরল মানুষ ছিলো তাই না।

রিহানের আব্বু-হম্ম…গবেষনার নেশায় পাগল হয়ে গেছিলো। যে রাতে রিহান হলো। সে রাতেই তার টাইম মেশিনের কাজ শেষ হলো। কিন্তু….

রিহানের আম্মু চোখ মুছে বলল-ঐ টাইম মেশিন ই তো বাবার কাল হয়ে দাড়ালো।রিহানকে হসপিটালে দেখতে আসার পর যখন খবর পেল
টাইম মেশিনের ইঞ্জিনের আগুন লেগে গেছে।
আর তিনি সেটা বাঁচাতে ছুটে চলে গেলো…..

রিহানের মা কথা শেষ করতে পারলো না তার গলা ধরে এলো।

রিহানের আব্বু আবার বললেন-তারপর যখন গিয়ে দেখল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে নিজেও সেই আগুনে লাফ দিয়ে আত্নহত্যা করলো।বাবার লাশটা পর্যন্ত খুজে পাই নি সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

রিহানের মা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বলল- বাদ দাও সেসব কথা আজ রিহানের জন্মদিন। চলো ওকে উইশ করি।

রিহানের আব্বু-হম্ম চলো…..আজ ওকে ওর দাদার কথা বলবো। ওকে কখনো বলাই হয় নি
কি করে বলবো বলো যে ও যেদিন হয়েছে ওর দাদা সেদিনই মারা গেছে।

রিহান তার বাবার কথা শুনে থর থর করে কাপতে থাকে।সে কিছু ভাবতে পারে না।
সে চুপ চাপ তার রুমের সোফায় গিয়ে বসে। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না সে একজন মরা মানুষের সাথে সারা সকাল কাটিয়েছে।
রিহান গা এলিয়ে সোফায় বসে। কিছুক্ষণ পর সে আবিস্কার করে টি-টেবিলে একটা ডায়রী আর কলম রাখা।

ডায়রীর প্রথম পাতায় বড় করে সুন্দর হাতের লেখায় লেখা রমতিয়াজ উদ্দিন মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা হোসেন শাহ।

সম্পর্কিত পোস্ট

পূনর্জন্ম

জুয়াইরিয়া জেসমিন অর্পি . কলেজ থেকে ফিরেই পিঠের ব্যাগটা বিছানায় ছুড়ে ফেললো অন্বেষা। তারপর পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে ধপ করে বসে দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরলো।প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ ওর। আজ ওদের সেমিস্টার ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। একদমই ভালো করেনি সে। যদিও শুরু...

অনুভূতি

অনুভূতি

লেখা: মুন্নি রহমান চারদিকে ফজরের আজানের সুমধুর ধ্বনি ভেসে আসছে। বাইরে এখনো আবছা অন্ধকার। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছাড়লো মালা। ঘরের কাজ সেরে বের হতে হবে ফুল কিনতে। তাড়াতাড়ি না গেলে ভালো ফুল পাওয়া যায় না আর ফুল তরতাজা না হলে কেউ কিনতে চায় না। মাথার ওপরে তপ্ত রোদ যেন...

অসাধারণ বাবা

অসাধারণ বাবা

লেখক:সাজেদ আল শাফি বাসায় আসলাম প্রায় চার মাস পর। বাবা অসুস্থ খুব।তা নাহলে হয়তো আরও পরে আসতে হতো।গাড়ি ভাড়া লাগে ছয়শো পঁচিশ টাকা।এই টাকাটা রুমমেটের কাছ থেকে ধার নিয়েছি।তার কাছে এই পর্যন্ত দশ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে।বলি চাকরি হলেই দিয়ে দিব। পড়াশোনা শেষ করে দুই বছর...

০ Comments

Submit a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *